সবকিছু ঠিক থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের লন্ডন যাবেন। কোনো কারণে দেরি হলে পরদিন ৮ জানুয়ারিও হতে পারে তাঁর এ যাত্রা। তবে এ সপ্তাহে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়া যাবেন যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, ‘ম্যাডাম বিদেশ যাবেন এটা ঠিক আছে। তবে সেটা ৭ জানুয়ারিও হতে পারে, আবার ৮ জানুয়ারিও হতে পারে।’ অধ্যাপক জাহিদের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম, আত্মীয়স্বজনসহ ১৮ সদস্যের সহযোগী দল সঙ্গে যাওয়ার কথা। নানা জটিল রোগসহ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিএনপি ও জিয়া পরিবারের।
এরই মধ্যে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে। তবু বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে একরকম চিকিৎসাবঞ্চিত করে রাখে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তার পরই তাঁর লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে কয়েকবার বিদেশযাত্রার দিনক্ষণ ঠিক হলেও বিভিন্ন কারণে তা বাতিল হয়েছে। অবশেষে ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাবে। যাঁর মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান। জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়াকে ৭ জানুয়ারি রাত ১০টা কিংবা তারও পরে একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স উড়োজাহাজে করে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকরা। আধুনিক সুযোগসুবিধাসংবলিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাবেন। দীর্ঘ এ যাত্রায় তাঁর সঙ্গে থাকবেন চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা। জানা গেছে, খালেদা জিয়া প্রথমে যাবেন ছেলে তারেক রহমানের কাছে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। ম্যারিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, বেগম জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার তারিখ সুস্পষ্টভাবে বলতে পারব না। কারণ ওনার শরীর মাঝেমধ্যেই একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন খালেদা জিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তিনি যাত্রাবিরতি করেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ই-কে ৫৮৭ ফ্লাইটে স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে দুবাই বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩-এ অবতরণ করেন। তাঁর যাত্রাবিরতির খবরে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপি নেতারা বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। ১৬ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বেগম জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। লন্ডনে মা-ছেলের এ সাক্ষাৎকালে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান উভয়েই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারেক রহমান নিজের গাড়িতে করে মা খালেদা জিয়াকে গন্তব্যে নিয়ে যান। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী হিসেবে তাঁর একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ছিলেন।
লন্ডন থেকে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরে ২৯ অক্টোবর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেখতে যান খালেদা জিয়া।